দশটি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ৭ম শ্রেণি
সামাজিক মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্যপ্রত্যেকটি মানুষের সামাজিক রীতিনীতি ও এর মূল্যবোধ থাকা অনেক বেশি প্রয়োজন। এর কারণ হচ্ছে যে মানুষের রাজনীতি বা মূল্যবোধ বলতে কিছু নেই সে মানুষকে অন্তত মানুষ হিসেবে গণ্য করা যায় না। এই ক্ষেত্রে তাই প্রত্যেকটি মানুষকে সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব দশটি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে বিস্তারিত। এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে আজকের পোস্টটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে সবার জন্য।
বিশেষ করে এই পোস্টটি সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়টিকে ধরা হয়ে থাকে সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ শিকার উপযুক্ত সময়। তাই আজকে আমরা আলোচনা করব এই সকল বিষয়গুলি নিয়ে। তাই আপনি যদি সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য এই পোস্টটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক দশটি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সপ্তম শ্রেণী।
দশটি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সপ্তম শ্রেণী
প্রিয় শিক্ষার্থী বিন্দু তোমাদের প্রত্যেকেরই এই দশটি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সপ্তম শ্রেণীতেই ভালোভাবে জ্ঞান অর্জন করে নিতে হবে। এর কারণ হচ্ছে সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ শেখার উপযুক্ত সময়ে মনে করা হয় ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণীর পর্যন্ত। এছাড়াও এই সামাজিক রীতি নীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে ।চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক দশটি সামাজিক রীতি ও মূল্যবোধ কি কি রয়েছে।আরো পড়ুনঃ মানুষের মন পরিবর্তনশীল কেন
- ১ ) সালাম দেওয়া, তোমাদের থেকে বয়সে বড় কোন ব্যক্তিকে দেখলে তাদের সালাম দিতে হবে। ও তাদের যথেষ্ট পরিমাণে সম্মান করতে হবে। তারা যেন তোমার আচরণে কষ্ট না পায় এরকম আচরণ করতে হবে।
- ২) ছোটদের স্নেহ করা, তোমার থেকে ছোট যাদের বয়স হয়েছে তাদের সব সময় ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়ে কথা বলবা ও ভালো আচরণ করবা। দেখবেন আপনার সঙ্গেও আপনার সেই ছোট বাচ্চাটি ভালো ব্যবহার করবে এবং আপনাকে সম্মান করবে।
- ৩) প্রাচীনকালের রীতিনীতি বাচ্চাদের দাঁত উঠলে ইঁদুরের গর্তে ফেলে দেওয়া। এই রীতিনীতি সেই প্রাচীন কাল থেকে চলে আসছে। এর কারণ হচ্ছে ইঁদুরের গর্তে নাকি দাঁত ফেলে দিলে ইঁদুরের দাঁতের মতো ছোট ছোট ও শক্তিশালী দাঁত হয়। এই কথা ভেবে এখনো বাচ্চাদের দাঁত উঠলে ইঁদুরের গর্তে সেই দাগ ফেলে দেওয়া হয়।
- ৪) যেকোনো জিনিস ডান হাতে খাওয়া। এ কথাটি ও সমাজে বহু প্রচলিত একটি কথা। ডান হাত ছাড়া অন্য হাতে খেলে সেই খাবারে বরকত আসে না আবার কেউ কেউ বলে থাকে এই খাবারটি খেলে নাকি শয়তানের হাত দিয়ে খাওয়া হয়। এজন্য বাম হাত দিয়ে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।এবং ডান হাত দিয়ে খাওয়া দাওয়া করতে হবে। যে কোন জিনিসপত্র আদান প্রদান করার সময় ডান হাত দিয়ে আদান প্রদান করতে হয়। এটিও একটি সম্মানিত বিষয় হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে সমাজে।
- ৫) প্রাচীনকালের আরো একটি কথা রয়ে গিয়েছে। পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে বা পরীক্ষা চলাকালীন কেউ ডিম বা কলা বা গোল জাতীয় জিনিস মিষ্টি এই সকল জিনিস না খাওয়া। এগুলো খেলে নাকি পরীক্ষায় শূন্য পাওয়া যায়। এর কারণ হচ্ছে ডিম গোলাকার ডিম খেলে যদি শূন্য পায় সেজন্য ডিম খাওয়া যাবে না মনে করা হয়। কলা একের মতো ভাজ এর জন্য কলা খাওয়া যাবে না যদি এক পায় এগুলোও ভাবা হয়। এই ভেবে পরীক্ষা চলাকালীন বাচ্চাদের ডিম কলা মিষ্টি এগুলো থেকে বিরত রাখে।
- ৬) গর্ভ অবস্থায় যমজ কলা থেকে বিরত থাকা। এর কারণ হচ্ছে অনেকে মনে করে গর্ব অবস্থায় যদি কেউ জমজ কলা খায় তাহলে তার সঙ্গে দুইটি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কথাগুলো ভেবে তারা জমজ কলা খেতে মানা করে। আর এই রীতিনীতি এখন পর্যন্ত আমাদের সমাজে প্রবাহিত রয়েছে।
- ৭) ছোট বাচ্চাদের কপালে ফোটা দেওয়া। অনেক মানুষ রয়েছে যারা ছোট বাচ্চাকে বাইরে বের করার সময় অনেক বড় একটি কাজলের ফোঁটা তার কপালে দিয়ে দেয়। এই কাজলের ফটো দেওয়ার কারণ হচ্ছে কারো যেন নজর না লাগে বাচ্চার উপরে। এই ফোটা দিয়ে তারা বিশ্বাস করে যে তাদের বাচ্চার কোন সমস্যা হবে না বা কারো নজর লাগবে তার বাচ্চার উপরে। এই কথা ভেবে তারা বাচ্চাদের কপালে কালো ফোঁটা দিয়ে থাকে। তাই এখনো এই বিষয়টি প্রবাহিত রয়েছে আমাদের সমাজে।
- ৮) ভাঙ্গা আয়না না দেখা। অনেকে মনে করে ভাঙ্গা আয়না চেহারা দেখলে নাকি তার সবকিছু অমঙ্গল হয়। তাই প্রাচীনকাল বা আগের মানুষেরা ভাঙ্গা আয়নাতে মুখ দেখতে দেয় না। কোন কিছু অশুভ হতে পারে এই জন্য। একটু আয়না ভেঙে গেলেই সেটি আর না দেখে ফেলে দেয়। আর এই রীতিনীতি ও এখনো আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
- ৯) বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বা বাসাতে ঢোকার সময় ডান পা আগে দেওয়া। এই কথাটি অনেক আগে থেকেই প্রচলিত রয়েছে যে কোথাও বের হওয়ার সময় ডান পা আগে দিয়ে বের হতে হবে এবং ঢোকার সময় ডান পা আগে দিয়ে ঢুকতে হবে। এ কথাটি আমাদের ইসলামের বর্ণিত রয়েছে যেকোনো ভালো কাজের সময় ডাইন হাত আগে দিয়ে শুরু করতে হবে এবং ডান পা আগে বাড়িয়ে শুরু করতে হবে। এতে মঙ্গল রয়েছে। আর এ রীতি নীতিটি এখনো আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
- ১০) বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। এ কতটি ও আমাদের সমাজে এখনো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে যে সমাজে যে কারো বিয়ে হলে সমাজের প্রত্যেকটি লোকের সেখানে মত প্রকাশ করার অনুমোদন থাকে। এর কারণ হচ্ছে বিবাহের সময় কোনটি ভালো কোনটি খারাপ এটি শুধু একজনে বিচার করতে পারে না তাই প্রত্যেকটি মানুষই একসঙ্গে বসে সেগুলি আলাপ-আলোচনা করে। আর প্রত্যেকটি ভালো কাজের সময় এই ধরনের আলাপ-আলোচনা করাটা এখনো রয়ে গিয়েছে।
সামাজিক মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য
আমরা এতক্ষণ আলোচনা করেছি সামাজিক রীতিনীতি গুলো সম্পর্কে কয়েকটি মতামত। তবে আমরা এখন আলোচনা করব সামাজিক মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি রয়েছে এ সকল বিষয়গুলি নিয়ে। সামাজিক রীতি-নীতির উপরে জ্ঞান রাখা আমাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন। এর পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন সামাজিক মূল্যবোধের উপরও জ্ঞান রাখা। চলুন তাহলে সামাজিক মূল্যবোধগুলো কি কি রয়েছে এগুলো দেখে নিন।আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা
- বড়দের সালাম দেওয়া ও সম্মান করা।
- ছোটদের ভালোবাসা প্রদান করা ও স্নেহ করা।
- এমন কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে যেন অন্যের কাছে খারাপ না হও বা অন্য কেউ আপনাকে খারাপ বলে।
- এমন কোন কাজ করা যাবে না যাদের সমাজের লোকের ক্ষতি হয় বা বিভিন্ন মানুষের ক্ষতি হতে পারে।
- রাষ্ট্রের প্রতি সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে যেন রাষ্ট্রের কোন ক্ষতি আপনার দ্বারা না হয়।
- প্রত্যেকটি মানুষের কথার মূল্য দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- শ্রেণিকক্ষে স্যারদের সম্মান করা ও সালাম দেওয়া।
- প্রত্যেকটি ক্লাসের পড়া ঠিকমতো ভাবে করে যাওয়া।
- স্যারদের কথা অমান্য না করা।
সামাজিক রীতিনীতি প্রয়োজনীয়তা
সামাজিক রীতিনীতি প্রয়োজনীয়তা প্রত্যেকটি মানুষেরই অনেক বেশি রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে একটি মানুষের যদি সামাজিক রীতি-নীতি সম্পর্কে ধারণা না থাকে তাহলে সে সমাজকে সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আর কোন ব্যক্তির যদি সামাজিক রীতিনীতি ভালো থাকে এই সম্পর্কে ভালো বুঝে তারা চাইলে খুব সহজে একটি সুন্দর সমাজ উপহার দিতে পারে জনগণের মাঝে।তাই সুন্দর সমাজ ও সঠিক আইন প্রয়োগে সামাজিক রীতিনীতি অনেক বেশি গুরুত্ব পূর্ণ। এবং সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান যা রয়েছে তারা নিয়ম কানুন মেনে চলতে পারে এবং সামাজিক যে সকল বিষয়গুলি রয়েছে যেগুলি দেখাশোনা করতে পারে। আশা করছি সামাজিক রীতি-নীতির প্রয়োজনীয়তা কি এই সম্পর্কে আপনাকে শুধু একটিমাত্র ধারণা দিলাম।
লেখকের মতামত
আজকে আমরা আলোচনা করেছি দশটি সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে। এবং ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণীর পর্যন্ত যে বিষয়গুলো বেসিকভাবে মানুষের ভিতরে থাকা প্রয়োজন এই সকল বিষয় গুলি আলোচনা করেছি। আপনি যদি এই কথাগুলো মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনিও পারবেন।এবং বিশেষ করে সপ্তাহ শ্রেণীর যারা রয়েছে তারা যদি এই বিষয়গুলি ভালো করে পড়েন তাহলে সামাজিক রীতিনীতি সম্পর্কে তাদের যথেষ্ট পরিমাণে ধারণা হয়েছে ও সামাজিক রীতি নীতি কি এবং মূল্যবোধ কি এই সকল বিষয় গুলি বুঝতে সক্ষম হয়েছে। এই পোস্টটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হন অবশ্যই আপনার পরিচিতদের কাছে শেয়ার করবেন এবং আপনার মূল্যবান মতামতটি করে জানতে ভুলবেন না।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url